আমজাদ হোসেন,আনোয়ারা
একসময় আনোয়ারায় সরিষা ক্ষেত চোখেই পড়তো না। এখন দিনে দিনে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে যাচ্ছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। যেন বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। পৌষের হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষার ফুল। ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি ‘লাভের ফসল’ সরিষার বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি।আমন ও বোরো চাষের মধ্যবর্তী মাত্র ৩ মাস সময়ে অতিরিক্ত ফসল হিসাবে সরিষার চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষকেরা।
এবার উপজেলার প্রায় ৫শ’ কৃষক ৪২ হাজার শতক (১৭০ হেক্টর) জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। প্রতি কানিতে (৪০শতক) খরচ বাদে ১৫ হাজার টাকার বেশি আয় করার আশা কৃষকের। যেখানে ধান চাষে খরচ তোলাই দায় সেখানে এক রকম বিনা খরচে সরিষা চাষ করে ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। তবে সরিষা ভাঙ্গানোর জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ঘানি থাকলে কৃষক আরো বেশি লাভবান হতো বলে দাবি স্থানীয়দের।
আমন ধান তোলার পর জমিতে মই দিয়ে ফেলা হয় সরিষা বীজ। সাধারণত সরিষা চাষে তেমন কোন খরচ নেই। এবার আনোয়ারায় কৃষি অফিসের পাশাপাশি সরিষা চাষে সহযোগি হিসাবে কাজ করেছে এনসিসি ব্যাংক। প্রতিজন কৃষককে দুই কেজি বীজের সাথে এক বস্তা সার, স্প্রে মেশিন ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ দেয়া হয়। সেই বীজ থেকে দুই মাসের মাথায় ফসলে ফুল ফুটেছে। চলতি মাসের শেষের দিক থেকে ফসল তোলা শুরু হবে। এই সাফল্যে খুশি আনোয়ারা কৃষি অফিসও।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার পরৈকোড়া, চাতরী, হাইলধর,রায়পুর ইউনিয়নে এবার সর্বোচ্চ পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে। সারা উপজেলায় প্রায় ৪২ হাজার শতক (১৭০ হেক্টর) জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে।
এখানে মূলত বারি-১৮ জাতের সরিষা চাষ হয়েছে বেশি। এই জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং খরচও হয়। প্রতি শতক জমিতে ৬ কেজি সরিষা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। প্রতি কানি (৪০শতক) জমিতে খরচ বাদে ১৫ হাজার টাকার বেশি লাভ থাকবে বলে আশা কৃষকদের। সরিষা গাছে ফুল আসায় মাঠগুলোতে এখন হলুদ রঙের নান্দনিকতা ছড়াচ্ছে। বাড়তি লাভ হওয়ায় আমন ধান উত্তোলনের পরে জমি ফেলে না রেখে সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন কৃষকেরা। মাত্র তিন মাসের মধ্যে ফলন ঘরে তোলা যাবে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি সরিষা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক রহিম বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে। আর বীজ, সার, কৃষি উপকরণসহ সব ধরনের খরচ দিয়েছে এনসিসি ব্যাংক। আমরা এবার এক রকম ফ্রি-তে চাষাবাদ করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, ফলনও হয়েছে ভালো।
এনসিসি ব্যাংক আনোয়ারা শাখা ব্যবস্থাপক এস এম মঈন উদ্দীন আজাদ বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আওতায় এনসিসি ব্যাংক এবার আনোয়ারায় ৩ শতাধিক কৃষকের মধ্যে সরিষা বীজ, সার ও কৃষি উপকরণ বিতরণ করে। উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের সরিষা চাষাবাদ সংক্রান্ত শিক্ষণ প্রদান করে। সবমিলিয়ে কৃষকেরা মাঠে সোনা ফলিয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী হায়দার জানান, আনোয়ারায় সরিষা চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। সামান্য পরিচর্যা আর অল্প খরচেই লাভ মিলছে ভালো। আমন ও বোরো ধানের মাঝামাঝি সময় হচ্ছে সরিষার চাষ। এ সরিষা তুলেই চাষিরা রোপণ করবেন বোরো। সরিষা বিক্রির টাকাতেই উঠে আসবে বোরো চাষের খরচ।
Leave a Reply